নিজস্ব প্রতিবেদক:: শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনের ২য় দিনে (বৃহস্পতিবার) ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অসুস্থ শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে থাকে। তাই তাৎক্ষণিক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিম শাবিতে গিয়ে উপস্থিত হন। এসময় তারা কয়েকজনের অবস্থা খারাপ হলে স্যালাইন পুশ করেন।
এর আগে বুধবার রাতে আন্দোলনরত অবস্থায় দুজন ও বৃহস্পতিবার (২০জানুয়ারি) সকালে আমরণ অনশনরত দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক রাত ১০টায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা রাত ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে এম্বলেন্স যোগে নগরীর মাউন্ড এডোরা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তারা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এদের মধ্যে মোজাম্মেল হকের জ্ঞান ফিরে আসলেও তিনি শ্বাসকষ্টে ভোগায় তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে ১১টার দিকে নিশাত নামে একজনসহ দুজন অনশনকারী শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এম্বলেন্স আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট প্রতিদিনের স্টাফ আলোকচিত্রী তারেক আহমদ চৌধুরী রাহেল। আন্দোলনরত দুজন ও আমরণ অনশনরত দুজনসহ চারজন শিক্ষার্থী অসুস্থের খরব পাওয়া গেছে।
আন্দোলনকারী নাফিজা আনজুম বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তাদের মনোবল অনেক শক্ত। ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। তবে আমাদের অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, অনশনকারীদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
এ মুহূর্তে শাবিপ্রবিতে মেডিকেল সাপোর্ট প্রয়োজন উল্লেখ করে নাফিজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের পাশে নেই। আমরা নিজেরাই একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে এনেছিলাম। কিন্তু আমাদের মেডিকেল সাপোর্ট প্রয়োজন। সিলেটে বা আশপাশে যারা ডাক্তার বন্ধুরা আছেন তারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। অনশনকারীদের পাশে দাঁড়ান।
অন্যদিকে, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস। অষ্টমদিনের দিনের মতো উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে অবস্থান করছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে বুধবার সকাল ১১টা থেকে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ২টা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনশন করে যাচ্চি।
অনশনরত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কোনো কিছু হলে এর দায়ভার ভিসিকেই নিতে হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এদিকে বুধবার রাত পোনে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ না করলে তাদের কোনো কথাই শুনবে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্বতা পোষণ না করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্থান ত্যাগ করেন শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে এনে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা এবং দাবী না মানা পর্যন্ত আমরন অনশনের ঘোষণা দিয়ে গোটা শাবি ক্যাম্পাসকে আন্দোলনে উত্তাল করে তুলে শির্ক্ষাথীরা।